Social Icons

চোখ থাকবে যে পাঁচটি বিষয়ের দিকে প্রযুক্তির বছর ২০১৩ তে

প্রযুক্তি বিশ্বে ২০১৩ সাল হবে অভাবনীয় এক পরিবর্তনের বছর। আমাদের প্রজন্ম গত পাঁচ বছরে প্রযুক্তির অভিনব আবিষ্কার ও পরিবর্তনের যে গতি দেখেছে তাতে নিঃসন্দেহে বলা যায় এই সময়ের খুঁটিনাটি আবিষ্কার, স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেটসের যুগ হয়তবা আর বেশি দিন নেই, তার বদৌলতে স্থান করে নিবে প্রযুক্তির চমকপ্রদ কোন আবিষ্কার। স্বভাবতই অনেক শক্তিশালী মোবাইল সেটগুলো এখন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট গতির সুবিধা দিচ্ছে এবং এতে যুক্ত হচ্ছে বড় স্ক্রিণের সাথে দ্রুত গতির প্রোসেসর। প্রযুক্তিতে ২০১৩ সাল হবে একটি অনবদ্য এবং অমূল্য একটি বছর।
চোখ থাকবে যে পাঁচটি বিষয়ের দিকে

১. মাইক্রোসফটের ভবিষ্যত

অ্যাপলের আইফোন বাজারে আসার পর থেকে বরাবরই মাইক্রোসফট প্রতিটি প্রজন্মকে তাদের আবিষ্কার দিয়ে মাতিয়ে রেখেছে। ২০১২ তেও মাইক্রোসফটের প্রচেষ্টা ছিল নজর কারার মতই। এই বছরেই তারা বাজারে নিয়ে আসে কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ ৮ এর পূর্ণ সংস্করণ, উইন্ডোজ আরটি ট্যাবলেটসের জন্য এবং উইন্ডোজ ফোন ৮ স্মার্টফোনের জন্য। এই বছরেই মাইক্রোসফটের সিইও স্টিভ বলমার মাইক্রোসফটের ‘ডিভাইস এন্ড সার্ভিস’ কোম্পানিতে নিযুক্ত হোন এবং মাইক্রোসফট ঐতিহ্যবাহী কম্পিউটার প্রস্তুতকারী কোম্পানি ডেল এবং সনির সাথে পাল্লা দিয়েই তাদের নতুন দুটি ট্যাবলেটস কম্পিউটার ‘সারফেস’ এবং ‘সার্ফেস প্রো’ বাজারে নিয়ে আসে।
এগুলো ছিল মাইক্রোসফটের কিছু সাহসী পদক্ষেপের উদাহরণ, ২০১৩ সালে মাইক্রোসফটের আরো কিছু পদক্ষেপ পূর্ণতা পাবে। পিসি কম্পিউটারের দিন অনেকটা ঘনিয়ে এসেছে, ২০১৩ সালে মাইক্রোসফট তাদের গ্রাহকদের ট্যাবলেটস এবং স্মার্টফোন নির্ভর কিছু চমক দেখার জন্য প্রত্যয় গ্রহণ করেছে। উইন্ডোজ ৮ এবং সার্ফেস ট্যাবলেট এখনো বাজারে খুব একটা জনপ্রিয়তা না পেলেও নতুন বছরে এ নিয়ে মাইক্রোসফট একটা চমক দেখাবে বলে জানিয়েছে মাইক্রোসফটের উর্ধতন কর্মকর্তারা। চমকের প্রাথমিক শুরুটা হয়ত তারা এই বছর ক্লাউড স্টোরেজ এক্সবক্স দিয়েই শুরু করেছে।
২. অ্যাপল কি আবারো মোজো সফটওয়্যার ফিরিয়ে নিয়ে আসবে?

২০১২ সালে অ্যাপল বড় স্ক্রিণের আইফোন এবং ছোট স্ক্রিণের আইপ্যাড বাজারে নিয়ে এসে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে, তবে অ্যাপলকে তাদের সফটওয়্যারের ফিচার সমৃদ্ধ করে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হবে।
অ্যাপলের বর্তমান সিইও টিম কুক স্টিভ জবসের মৃত্যুর পরবর্তীতে দ্বায়িত্ব গ্রহণের পর প্রায় একই সাথে আইফোন ৪ এস এবং আইফোন ৫ বাজারে আসে। সফটওয়্যারসমূহের অসমৃদ্ধ ফিচারের কারণে ডিভাইস দুটি অ্যাপলের সুনাম অনেকটাই ম্লান করে দেয়। অ্যাপল ৪ এসের সাথে খুব সুন্দরভাবে ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট সফটওয়্যার সিরি ভয়েস বাজারে আসলেও ব্যাবহারে জটিলতা থাকায় গ্রাহকদের কাছে অনেকটাই এই ফিচারের গ্রহণযোগ্যতা হারায়। আইফোন ৫ এ টিম কুক অনেকটা বাধ্য করেই গ্রাহকদের হোমগ্রাউন্ড ম্যাপ অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যাবহার করতে বাধ্য করান কিন্তু গ্রাহকদের কাছে এই সফটওয়্যারের ফিচারটিও গ্রহণযোগ্যতা হারায়। এসব কারণেই ২০১৩ সালে অ্যাপল হয়ত তাদের পুরোনো ডেস্কটপ ব্যাকগ্রাউন্ড প্রোগ্রাম ফিচার মোজো আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারে।
এছাড়াও গুগল তাদের নিজস্ব কিছু প্রোডাক্টের ফিচার যেমন জিমেইল, ক্রোম এবং ইউটিউব আইফোন অ্যাপ্লিকেশনের জন্য বিনামূল্যে বাজারে ছেড়েছে। যেটা আইফোনের জন্য কোনমতেই সুখকর নয়।
আইফোনের সিরি এবং ম্যাপস অ্যাপ্লিকেশনের জন্য কুক অনেকটাই আইফোন অপারেটিং সিস্টেমের প্রধান স্কট ফোরস্টলের উপর বিরক্ত হয়েছেন। ডিজাইনার জনি ইভ বর্তমানে আইফোনের সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার দুটি বিভাগেরই দ্বায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৩ সালে হয়ত অ্যাপল তাদের পরবর্তী আইফোন এবং আইপ্যাডে ম্লান হয়ে যাওয়া তাদের সুনাম আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসতে সমর্থ হবে।
৩. আমাজন কি অ্যাপল এবং গুগলের সাথে প্রতিযোগিতায় যেতে পারবে?

খুব সহজ-সরল মানুষ আমাজনের সিইও জেফ বেজোস, আমাজন যখন ২০১২ সালের সেপ্টেমবরে প্রথম তাদের ‘কিন্ডল ফায়ার এইচডি’ ট্যাব বাজারে নিয়ে আসে তখন আমাজনের সিইও বলেছিলেন ‘কিন্ডল ফায়ার এইচডি’ বাজারের মধ্যে সবচেয়ে সেরা ট্যাব! এটি অবশ্যই অ্যাপল এবং আইপ্যাডের জন্য পিলে চমকানো একটা কথা ছিল। কিন্তু বাজারে আমাজনের ভাল প্রতিদ্বন্দী হচ্ছে গুগল, বিশেষ করে অনলাইন বুকস, মিউজিক এবং মুভি বাজারে।
অধিকাংশ মানুষেই তাদের প্রয়োজনীয় কন্টেন্ট এবং প্রোডাক্ট সাধারণত গুগলেই সার্চ করে থাকে এবং গুগল তাদের নিজস্ব প্রোডাক্টগুলোতেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে তাই আমাজনের এখানে হয়ত কিছু করার নেই কিন্তু আসন্ন বছরে আমাজন এমন একটি পরিকল্পনা করতে যাচ্ছে যাতে তাদের গ্রাহকরা তাদের সিস্টেম থেকেই সব ধরণের সেবা পেয়ে থাকবে। যেমনটি অ্যাপল আইপড এবং আইটিউন্স এর জন্য মিউজিকের একটি ইকোসিস্টেম করেছে। আমাজনও হয়ত এই রকম একটা ইকোসিস্টেম করতে ছাড় দেবে না।
এখন পর্যন্ত আমাজনের কিন্ডল ফায়ার অ্যাপলের আইপ্যাডের সাথে পাল্লা দিতে সামর্থ নয় এবং গুলের সাথে পাল্লা দিতেও তাদের প্রয়োজনীয় সেবা যথেষ্ট নয়। অন্ততপক্ষে আমাজনকে তাদের কিন্ডল ফায়ারে মেইল এবং সার্চ অপশন চালু করতে হবে, সামাজিক যোগাযোগের জন্য তাদের নিজস্ব প্লাটফর্ম এখনো নেই। যদিও সেবাগত দিক দিয়ে আমাজন এখনো অনেক পিছিয়ে তবে গঠনকাঠামোগত দিক দিয়ে আমাজন একটি উচ্চমাপের কোম্পানি। ২০১৩ সালে আমাজন হয়ত তাদের গুজবগুলোকে সত্যতে পরিণত করবে।
৪. ফেসবুকের জনপ্রিয়তা কি শীর্ষেই থাকবে?

পাবলিক কোম্পানি হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর ২০১৩ সালটিই ফেসবুকের জন্য প্রথম বছর। ফেসবুককে নিশ্চিত করতে হবে বিনিয়োগকারীদের জন্য ফেসবুক কতটা বিশ্বাসযোগ্য এবং মুনাফাদায়ক। বর্তমান সময়ে ফেসবুকের অধিকাংশ ব্যাবহারকারী যখন স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেটে ফেসবুক ব্যাবহার করে তখন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ফেসবুক কতটা অর্থ আয় করতে পারে তা এখন ফেসবুকের জন্য অনেকটাই চ্যালেঞ্জের বিষয়।
ব্যাবহারকারীদের বিরক্তির সীমার মধ্যে স্মার্টফোনে ফেসবুক কিভাবে বিজ্ঞাপ প্রচার করবে তা এখন দেখার বিষয়। তবে মার্ক জুকারবার্গকে অবশ্যই বিনিয়োগকারীদের কাছে এর জবাবদিহিতা দেওয়া লাগবে যে তারা ফেসবুকে বিনিয়োগ করে কতটা লাভবান হচ্ছেন। প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে ফেসবুকে এভাবে বিজ্ঞাপন প্রচার ফেসবুকের জনপ্রিয়তাকে অনেকটাই ম্লান করে দিবে।
৫. গুগল কি তাদের ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রোয়িড বন্ধ করে দিবে?

কঠিন হলেও সত্য বাজারে স্মার্টফোন কোম্পানিগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র অ্যাপল এবং স্যামসাংয়েই দাপটের সাথে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছে। এইচটিসি, সনি এবং স্বয়ং গুগল নিজেও তাদের মোটোরোলা নিয়ে বাজারে টিকে থাকতে হিমসিম খাচ্ছে। বাজারে এই ধরণের বৈষ্যম্যতার জন্য কিন্তু গুগল নিজেই দ্বায়ী।
স্পষ্টতই অ্যাপল আইফোনে তাদের নিজস্ব প্লাটফর্মের সফটওয়্যার চালাচ্ছে যেহেতু অপারেটিং সিস্টেমও তাদের নিজস্ব প্লাটফর্মের, কিন্তু স্যামসাং তাদের স্মার্টফোন এবং ট্যাবে গুগলেরই ওপেন সোর্স ওপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রোয়িড ব্যাবহার করছে, তবে স্যামসাং তাদের নিজস্ব ডেভলোপার দিয়ে কিছুটা পরিবর্তন করে নতুন একটি ভার্সন ব্যাবহার করছে, যেমনটি আমাজন তাদের কিন্ডল ফায়ার ট্যাবে ব্যাবহার করছে। যদি গুগল তাদের নিজস্ব ওপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রোয়িডের ওপেন সোর্স বন্ধ করে দেয় তাহলে অন্যান্য কোম্পানিগুলো স্বভাবতই পথে বসবে এবং অপরদিকে কিন্তু মাইক্রোসফটের জন্য বিশাল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে!
গুগল যথাসম্ভব মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোরও প্রতি অ্যান্ড্রোয়িড ব্যাবহারে একটা কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে। ইতিমধ্যে আমেরিকার এটি এন্ড টি মোবাইল অপারেটর কোম্পানি অ্যান্ড্রোয়িডের স্মার্টফোনগুলোতে অনেকটা বাধ্য করেই বিভিন্ন সফটওয়্যার আপডেটের সময় ব্যাবহারকারীদের ক্র্যাপওয়্যার ও ব্লটওয়্যার ইনস্টল করাতে বাধ্য করাচ্ছেন, গ্রাহকদের কাছে এটা বিরক্তিকর একটা বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।
গুগলের নেক্সাস ৪ বাজারে আসার পর গুগল এবং মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোর মধ্যে এই শ্ত্রুতা আরো প্রতিমূর্তি ধারণ করেছে। কারণ গুগলের এলটিই সার্ভিসকে কোন মোবাইল অপারেটরই সাপোর্ট করছেনা এই কারণেই গুগল হয়ত মোবাইল অপারেটরগুলোকে এক হাত দেখে নিতে পারে।
অ্যাপল এখানেই তাদের সাফল্য ধরে রেখেছে, তারা আইফোনের সিস্টেমকে এমনভাবে প্রতিরূপ দিয়েছে যাতে ব্যাবহারকারীদের কাছে সব কিছুই সহজ এবং হাতের নাগালেই হয়। অ্যাপল তাদের সিস্টেমের নিরাপত্তা ব্যাবস্থাকেও খুব শক্তিশালী করেছে। গুগলের সফলতার জন্যও গুগলকে তাদের অ্যান্ড্রোয়িডে এমন কিছু সহজ বব্যাবহারযোগ্য ফিচার সংযুক্ত করতে হবে যেন ব্যাবহারকারীদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা পায়।
এখানে শুধুমাত্র পাঁচটি বিষয়ের উপর আলোচনা করা হয়েছে। ২০১৩ সালে প্রযুক্তি বিশ্বে হয়ত চমকপ্রদ অনেক কিছুই অপেক্ষা করছে। এরই মধ্যে নকিয়া স্মার্টফোনের প্রতিযোগিতায় বিশাল এক ধাক্কা খেয়েছে। অ্যান্ড্রোয়িডের প্রতি অনীহাই তাদের এই ধাক্কা খাওয়ার মূল কারণ। ২০১৩ সালে নকিয়ার মাইক্রোসফট অপারেটিং সিস্টেমের উইন্ডোজ ফোন লুমিয়ায় একমাত্র ভরসা। লুমিয়া জনপ্রিয়তা না পেলে ২০১৩ সালের শেষের দিকে নকিয়া হয়ত মোবাইলফোন ব্যাবসা গুটিয়ে নিতে পারে। যেহেতু নকিয়া বর্তমানে মাইক্রোসফটের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে উইন্ডোজ নিয়ে কাজ করছে তাই মাইক্রোসফটেই হতে পারে নকিয়ার পরবর্তী কর্ণধার। ২০১৩ সালে স্মার্টফোন প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে যে জমজমাট লড়াই হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট

0 comments:

Post a Comment