আজ ১ মার্চ। স্বাধীনতার মাস। মাসজুড়ে সরকারি ও বেসরকারিভাবে উদ্যাপিত
হবে নানা অনুষ্ঠান। অনেকেই আগ্রহী হবে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে। তাদের
জন্য একটি তথ্যসমৃদ্ধ ওয়েবসাইট হলো: www.molwa.gov.bd এটি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাইট।

আজ থেকে তিন বছর আগেও সাইটটি নিয়ে এভাবে বলার সুযোগ ছিল না। বাংলা ভাষায় লেখা ওয়েবসাইটটি ক্রমশ সমৃদ্ধ হচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধের অমূল্য ১৫(খ)-এর দলিলপত্র শুধু পড়া নয়, পিডিএফ ফাইল হিসেবে নামানোর সুযোগ আছে। ১১ হাজার ২২২ পৃষ্ঠার বিশাল তথ্যভান্ডারকে প্রতি ১০০ পৃষ্ঠার জন্য একটি করে মোট ১১৬টি পিডিএফ ফাইলে রাখা হয়েছে। ফলে ধীরগতির ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমেও পুরো দলিলপত্র কম্পিউটারে নামানো যাচ্ছে।তবে পুরো দলিলপত্র পড়া কিংবা নামানোর ব্যবস্থাটি এমনভাবে রাখা হয়েছে যে চট করে বোঝা যায় না। প্রথমে মনে হয়, শুধু ভূমিকা পড়ার সুযোগ আছে। প্রথম পাতা থেকে ‘মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র ১৫(খ)’ বোতাম টিপে ঢোকার পর ১৫(খ)-এর তালিকা পাওয়া যায়। এরপর প্রতিটি (খ)-এ গিয়ে কয়েক পাতার পিডিএফ ফাইল পাওয়া যায়। সেখানে পুরো বইটি কোথায়, কীভাবে পড়া যাবে, সে ব্যাপারে নির্দেশনা থাকলে ভালো হতো। পড়ার জন্য পাশের সূচিপত্র বোতামটি চাপতে হয়, কিন্তু এটা এমনভাবে রাখা যে চট করে বোঝা যায় না পুরো বইটি পড়ার জন্য ওই বোতাম চাপতে হবে। ভূমিকা পাতার নিচে সূচিপত্রের লিঙ্কগুলো দিলে সুবিধা হতো।
এই ওয়েবসাইটের আরেকটি অনন্য দিক হলো,
মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা শুধু নয়, তাঁদের প্রোফাইল দেখার সুযোগ। আগ্রহী
ব্যক্তিরা প্রথম পাতার ডান পাশে মুক্তিযোদ্ধা অনুসন্ধান কিংবা সদা জাগ্রত
বাংলার মুক্তিবাহিনী ছবিতে ক্লিক করে জেলা, উপজেলাভিত্তিক মুক্তিযোদ্ধাদের
প্রোফাইল দেখতে কিংবা প্রিন্ট নিতে পারেন। তথ্যে কোনো ভুল থাকলে লাল কালিতে
সঠিক তথ্যটি লিখে গণবিজ্ঞপ্তিতে নির্দেশিত নিয়ম অনুসরণ করে মন্ত্রণালয়কে
জানাতে পারেন।

ওয়েবসাইটের ভিডিও আর্কাইভে সাতই মার্চের
ঐতিহাসিক ভাষণসহ মাত্র চারটি ভিডিও আছে। ফটো গ্যালারিতে পাকিস্তানি বাহিনীর
আত্মসমর্পণের ছবিসহ মাত্র ১০টি ছবি আছে। ছবিগুলোর ক্যাপশন বাংলায় থাকলে
ভালো হতো। যুদ্ধকালীন চিঠিপত্র বিভাগে রণাঙ্গন থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা
চারটি চিঠি থাকলেও একটি চিঠি দুবার থাকায় প্রকৃত চিঠির সংখ্যা তিনটি।
মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত তথ্যাবলি বোতামটিও দুবার আছে। এই ধরনের ছোটখাটো
ভুলগুলো সংশোধন করা গেলে ভালো। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন বইপত্রে
মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা চিঠিপত্র রয়েছে। সেগুলো যেমন এখানে রাখা যেতে পারে,
তেমনি এখানে একটি ঘোষণা দেওয়ার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা চিঠিপত্র
সংগ্রহ করা যেতে পারে।
সংবাদপত্রে মুক্তিযুদ্ধ বিভাগে নিউজউইক,
টাইম, দ্য ট্রিবিউনসহ বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকার মাত্র সাতটি নিউজ ক্লিপিং
আছে। যুদ্ধকালীন গান ও কবিতা বিভাগে আপনি শুধু ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে
যুদ্ধ করি’ গানটা শুনতে পারবেন। আরও গান ও কবিতা থাকতে পারে। ভাস্কর্য
গ্যালারিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ৯৩টি ভাস্কর্যের
ছবি ও পরিচিতি দেওয়া হয়েছে, যা সত্যিই প্রশংসনীয়।

স্বাধীনতার এই মাসে আমরা আশা করতে পারি,
সরকার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট আরও সমৃদ্ধ করবে এবং
প্রচারের ব্যবস্থা নেবে, যাতে করে দেশের মানুষ এই সাইট দেখার আগ্রহ বোধ
করে। দেশের মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর মতো ব্যবস্থাও এখানে থাকা দরকার।
যেমন: মানুষ যেন তাদের মতামত জানাতে পারে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আলোচনায় অংশ
নিতে পারে, এমনকি তারা যেন মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত তথ্য এখানে রাখতে পারে—সেই
ব্যবস্থাও থাকতে পারে।
তাই একটি বার হলেও ঘুরে আসুন একটি তথ্যসমৃদ্ধ ওয়েবসাইটে।
ওয়েবসাইট লিংক: www.molwa.gov.bd
0 comments:
Post a Comment